"আউটসোর্সিং- এ কর্মরতরা দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা সেবা নিশ্চিতকরণ ও বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে"
"আউটসোর্সিং- এ কর্মরতরা দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা সেবা নিশ্চিতকরণ ও বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে"
পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ
বর্তমান ছাত্র সমাজের গণঅভূত্থানের বাংলাদেশে সকল বৈষম্য নিরসনমূলক দাবি সমুহের মধ্যে অন্যতম যৌক্তিক দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে- আউটসোর্সিং- এ কর্মরতদের জন্য প্রণিত আউটসোসিং আইন-২০১৮ বাতিল করে কর্মরত সকলকে বয়স শিথিল করে স্ব-স্ব পদে জাতীয়করণ করতে হবে"। তাদের এই দাবি নিয়ে সংগঠিত বিভিন্ন মানববন্ধন, গোলটেবিল বৈঠক ও অবস্থান কর্মসূচি থেকে দেশের অনেক সাংবাদিক, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবী ও আইনজীবী সহ বিভিন্ন শ্রেনির মানুষ তাদের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি এই জাতীয় দাবির গভীরতা না বুঝে এই ন্যায্য দাবিকে ভুলুণ্ঠিত করতে চায়। এই দাবিকে জাতীয় দাবি বলার কারণ হলো- এখানে দেশের প্রত্যেক দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে নিয়োজিতদের একটি বৃহৎ অংশ জড়িত। তাই এই জাতীয় সমস্যার নিরসন জাতীয়ভাবেই করতে হবে।
এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলায় এলজিইডিতে প্রকল্পে কর্মরত উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান-
মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদা হলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এই চাহিদা সমুহের উপর বিবেচনা করেই বাংলাদেশের সংবিধানে সাজানো হয়েছে সকল মন্ত্রনালয়ের দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরকে। আর এ সকল দপ্তরে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োজিত সকলে এদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা সেবা নিশ্চিতকরণ ও বাস্তবায়নে নিরলসভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে তারা প্রত্যেকে স্ব-স্ব কাজে সুনিপুন কলা-কৌশল ও দক্ষতা অর্জন করেছে সেই সাথে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বর্তমান সরকারী চাকুরীর প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৮ অনুযায়ী রয়েছে। এত দক্ষতার সাথে দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা সেবা বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেও আউটসোর্সিং-এ কর্মরতরা পারছে না নিজেদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে। উল্লেখ করে বলতে গেলে বলা যায়- নেই তাদের নিয়মিত বেতন, নেই বোনাস, নেই শিক্ষা ভাতা, নেই ঝুঁকি ভাতা, নেই মাতৃত্বকালীন ছুটি, নেই নিদিষ্ট কর্ম ঘন্টা সহ নেই অন্যান্য সুবিধা। আছে শুধু চাকুরী হারানোর ভয় আর মানসিক হয়রানি। তবুও সব কিছু উপেক্ষা করে দেশের মানুষের জন্য নিজেদের বিলিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা কি তাদের দাবির সাথে একমত হয়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এতটুকু করতে পারি না?
এলজিইডি আউটসোর্সিং পরিবারের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুর রাকিব সনেট জানান -
আউটসোর্সিং- এ কর্মরতদের নিয়োগ দেয়া হয় আউটসোর্সিং আইন-২০১৮ বিধিমালা অনুসরণ করে। যা স্বৈরাচার সরকার কর্তৃক প্রণিত একটি বর্বর অন্ধকার আইন। যেখানে ইংরেজদের রেখে যাওয়া কৃতদাস প্রথার প্রতিফলন ঘটেছে। এই কালো আইন স্বৈরশাসকের দোসরেরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রণয়ন করেছে। যার সুবিধা গণঅভূত্থানের পরেও যদি দোসররা ভোগ করতে পারে তাহলে সারাদেশ লজ্জিত হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় এই জাতীয় দাবি মেনে নিয়ে অনতিবিলম্বে আউটসোর্সিং আইন-২০১৮ বাতিল করে কর্মরতদের বয়স শিথিল করে স্ব-স্ব পদে জাতীয়করণ করতে হবে। তবেই জাতি এই বিশাল বৈষম্য থেকে মুক্তি পাবে।
আউটসোর্সিং আইন-২০১৮ বাতিল করে কর্মরতদের রাজস্ব করতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়তো বিলম্ব হচ্ছে, কিন্তু একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে- বাংলাদেশের সকল দপ্তর, অধিপ্তর ও পরিদপ্তরে যত জনবল ঠিকাদার কর্তৃক টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে তাদের নিজ গ্রেডের বেতন ভাতার পরেও সরকার ঠিকাদারদের জনবল সরবরাহ কমিশন বাবদ প্রতিমাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা প্রদান করছে। যা সরকারী কোষাগার হতে অপচয় হচ্ছে তথা দেশের মানুষের অর্থ স্বৈরাচারের দোসররা কৌশলে আত্মসাৎ করছে। এই কালো আইন বাতিল হলে সরকারের কোষাগারে বিশাল অঙ্কের টাকা জমা থাকবে। সে টাকার মূলধন ও লভ্যাংশ মিলে প্রতি বছর সরকারী কোষাগারে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার অধিক জমা হবে। এই বিশাল অঙ্কের টাকাই অবহেলিত আউটসোর্সিং এ কর্মরতদের জাতীয়করণে অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখবে। শুধু সৎ ইচ্ছা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা হলেই এই বৈষম্যের নিরসন সম্ভব।
আরো একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাব্বি মৃধা এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান -
কিছু ছাত্র ও অভিভাবকদের প্রশ্ন থাকে যে, এত জনবল রাজস্ব হলে নতুন নিয়োগ হবে না। তাদের উদ্দেশ্যে জানাতে চাই, এই কালো আইন চালু থাকলে আপনি বা আপনার সন্তানকেও ডিজিটাল কৃতদাস হয়ে বাঁচতে হবে। কিন্তু এই কালো আইন বাতিল করে অবহেলিতদের রাজস্ব করলে প্রতিটি দপ্তরে সরকারী চাকুরীর অনেক বড় সংখ্যার নতুন পদ সৃজন হবে। তাতে দেশের মানুষ বেশি সেবা পাবে সেইসাথে আগামী প্রজন্ম দাস প্রথা থেকে মুক্তি পাবে এবং সরকারী চাকুরিতে যোগদানের বিশাল সুযোগ পাবে। কারণ খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজস্বকৃত অনেক বয়স্ক জনবল অবসরে যাবে। তাই স্বৈরশাসকের দোসরদের প্রলোভনে ভুল বুঝে যৌক্তিক দাবির বিপক্ষে গিয়ে দেশের অবহেলিত ও আগামী প্রজন্মের ক্ষতি করবেন না।
পরিশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, স্বৈরশাসক প্রণিত ঘনকালো অন্ধকার ও ঘৃণিত আউটসোর্সিং আইন-২০১৮ বাতিল করে কর্মরত সকলকে জাতীয়করণ করা বর্তমান সময়ের অত্যন্ত যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হবে। আউটসোর্সিং- এ কর্মরতদের জাতীয় দাবি বাস্তবায়িত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সকলের কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন জানান, উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে আউটসোর্সিং এর ভিত্তিতে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের প্রেরিত স্মারকলিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব মহোদয় বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি।
পিরোজপুর সংবাদদাতা
No comments